এম. আজিজুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক : নরসিংদীর রায়পুরায় দাফনের ৫০ দিন পর মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে আদালতের নির্দেশে ঝর্ণা আক্তার নিলা (২৫) নামে এক গৃহবধূর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বালুচর কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে এ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ১৫ আগষ্ট ঝর্ণা আক্তার নিলার মৃত্যু হলে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত ঝর্ণা আক্তার নিলা সায়াদাবাদ এলাকার মৃত মোসলেম মিয়ার মেয়ে ও একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো: আব্দুল্লাহর স্ত্রী। পেশায় নিলা একজন গৃহিনী ছিলেন। নিলা ও আব্দুল্লাহ দম্পতির ৩ সন্তান আছে। পরিবারসহ তারা রায়পুরা পৌর শহরের পূর্বপাড়া এলাকায় একটি ভবনে ভাড়া থাকতেন। নিলার পরিবারের দায়ের করা এক মামলায় বর্তমানে তার স্বামী আব্দুল্লাহ কারাগারে আছেন।
নিলার মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে বেশ কয়েকটি নথি আসে প্রতিবেদকের হাতে। এর মধ্যে সামাজিক সনদে ভাড়াটিয়া ও প্রতিবেশি ৬ জনের একটি গণস্বাক্ষরিত কাগজে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ আগষ্ট দুপুরে ঝর্ণা আক্তার নিলা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তার স্বামী ও প্রতিবেশিরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক নিলাকে মৃত ঘোষনা করে। খবর পেয়ে নিলার মা ও স্বজনরা ভাড়াটিয়া বাসায় আসলে তাদের সম্মতিক্রমে বাসার নিচ তলায় নিলার মৃতদেহের গোছল করানো হয়। এরপর লাশ সায়দাবাদে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া মৃত্যুর প্রমাণ পত্রে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা আছে হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বা শাষযন্ত্রের ব্যর্থতায় নিলার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর গত ২৮ আগষ্ট নিহত ঝর্ণা আক্তার নিলার মা সাফিয়া খাতুন বাদী হয়ে নিলার স্বামী আব্দুল্লাহ সহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
নিহতের মা সাফিয়া বেগম মামলায় উল্লেখ করেন, ১২ বছর আগে আব্দুল্লাহর সাথে নিলার বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ দেশে ফেরার পর থেকেই অন্য ভালো একটি রাষ্ট্রে যাবে বলে নিলার পরিবারের কাছে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে এনে দেওয়ার জন্য নিলাকে নির্য়াতন করতে থাকে। পরে তারা কিছু টাকা পরিশোধ করে। গত ১৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় লোকমুখে তারা ঝর্ণার মৃত্যুর খবর শুনতে পারে। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে তড়িগড়ি করে কবর দিয়ে ফেলেছে। এরপর তারা নিলার মৃত্যুর কারন জানতে গেলে ভাড়াটিয়া বাসায় ও এলাকায় কাউকে পায়নি।
মামলা দায়েরের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহম্মদ আলী আহসান এর স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে উক্ত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য রায়পুরা থানাকে নির্দেশ প্রদান করে।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সোমবার বেলা ৩ টায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আদালতের আদেশক্রমে রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। বীনা তদন্তে লাশ দাফন করার কারনে আদালতের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশের সহায়তায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।