নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে জুট ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মনজুর মিয়া নিহতের প্রায়২১ ঘন্টা পার হলেও থানায় কোন মামলা রুজু হয়নি সেই সাথে হয়নি কোন আসামি গ্রপ্তার। মাধবদী থানার ওসি বলছেন এ বিষয়ে নরসিংদীর সদর মডেল থানা পুলিশ কাজ করছে এবং নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি বলছেন এখনো নিহতের ঘটনার স্থান সনাক্ত করা যায়নি, এজন্য কোন মামলা হয়নি এখনো।

এর আগে নরসিংদীর শেখেরচরে জুট ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুইগ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর এক যুবক নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছেন বখতিয়ার নামে একজন। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারী) সন্ধায় শেখেরচর বাবুরহাটে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মাধবদী থানার পৌলাণপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। আহত বখতিয়ার হোসেন এর ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে আহত বখতিয়ার হোসেন মেহেরপাড়া ইউনিয়ন তাঁতীদলের সভাপতি এবং মেহেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ইফতেখার হোসেন ইফতি‘র ছোট ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেখেরচর এলাকায় সানফ্লাওয়ার গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই মেহেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ইফতেখার হোসেন ইফতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনের মধ্যে মনমালিন্য হচ্ছিলো। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুবদল নেতা আকরাম সহ আরো বেশকিছু লোকজন যুবদল নেতা ইফতির ভাই তাঁতীদল নেতা বখতিয়ারের উপর গুলি চালায়। এতে বখতিয়ার ও তার ব্যবসার কর্মী আনোয়ার আহত হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনোয়ারের মৃত্যু হয়। অপরদিকে বখতিয়ারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

এব্যাপারে আহত বখতিয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শেখেরচর-বাবুরহাট বাজারে এক গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করছিল মনজুর। আমি বাজারে বেডশিডের কাপড় কিনতে এসেছিলাম। এ সময় মনজুর আমাকে দেখে বলেন আপনিও আসছেন নাকি। ঠিক ওই সময় আকরামসহ পাঁচ-ছয়জন লোক আসে। আমাকে দেখেই আকরাম বলে ওকে পাইছিরে বলেই গুলি ছুরতে থাকে। এ সময় আমার বাম হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগে এবং মনজুরের পেটে গুলি লাগে। পরে মানুষ জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়। আমাকে ও মনজুরকে প্রথমে মাধবদীর প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মনজুর মারা যায়।

নিহত মনজুরের স্বজনরা বলেন, গত দুই মাস আগে বখতিয়ারের কাছ থেকে চাকরি ছেড়ে সিগারেট কোম্পানিতে চাকরি করত মনজুর। তারা চার ভাই ও দুই বোন। মনজুরের দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে। চাকরির টাকায় চলতে হিমশিম খাওয়ায় বখতিয়ারের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ওয়াইফাই ও ডিশ সংযোগের কাজ করত মনজুর মিয়া।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, বখতিয়ার ও ইফতেখার এরা দুই ভাই। ঝুট ব্যবসা নিয়েই ইফতেখার ও বখতিয়ারদের সাথে আকরামের ঝামেলা চলে আসছিলো। তারা মূলত সেখানকার সানফ্লাওয়ার গার্মেন্টসের ঝুট কেনাকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে মূল সমস্যা ছিলো বলে জানতে পেরেছি। এরই জেরে গত ৩দিন আগেও বখতিয়ার ও ইফতির এক ভাইকে আকরাম মারধর করেছে। আমরা ধারনা করছি আকরাম বা তার লোকজনের গুলিতে ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তবে যে মারা গেছে তার সাথে তাদের কোন ধরনের শত্রুতা বা মিত্রতা নেই। সে বখতিয়ারের ডিস এবং ইন্টারনের ব্যবসার কর্মচারী ছিলেন।

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ কাজ করছে।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, এখনো নিহতের ঘটনার স্থান সনাক্ত করা যায়নি, এজন্য কোন মামলা হয়নি এখনো। তবে এ হত্যাকান্ডের তদন্তে কাজ করছে পুলিশ। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।