এম আজিজুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক : থামছেইনা অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাত্রা। দীর্ঘ এ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে কয়েকজন পার হতে পারলেও অধিকাংশ মানুষেরই শরীর সমাধি হচ্ছে সাগরের অতল গহ্বরে। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালি যাত্রা পথে একটি ট্রলার ডুবিতে এবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ৬ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি ওই ৬ যুবকসহ ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ আছেন তারা। তবে ওই ৬ যুবক জীবিত আছেন নাকি সাগরের পানিতে ডুবে মারা গেছেন সেটিও জানেন না পরিবারগুলোর কেও।
নিখোঁজ ৬ যুবক হলেন- উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের সাপমারা এলাকার সাদেক মিয়ার ছেলে জুয়েল, জয়নগর এলাকার নান্নু মিয়া ছেলে আশিক মিয়া, বেগমাবাদ ঝাউকান্দি এলাকার আব্দুল ছালামের ছেলে সায়েম, মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মুস্তাক, আরশ মিয়া ছেলে রাকিব ও তুলাতলী এলাকার লিটন মিয়ার ছেলে ইমরান।
নিখোঁজ পরিবারগুলোর সঙ্গে ‘আমার দেশ’ প্রতিনিধি কথা বললে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, লিবিয়া প্রবাসি তোফাজ্জল ও কবিরের মাধ্যমে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন রায়পুরার ৬ যুবক। ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য একটি ট্রলারে ওই ৬ জনকে তোলা হয়। লিবিয়ার বেনগাজি শহরের উপকূল থেকে ইতালি যাত্রা পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে দুইজন বাদে ৪৩ জন নিখোঁজ হন। ঘটনার আটদিন পেরিয়ে গেলেও রায়পুরার ওই ৬ যুবকের কোনো সন্ধান পায়নি তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে এম্বাসি অফ বাংলাদেশ ইন লিবিয়ার ফেসবুকে একটি পোষ্টের মাধ্যমে জানা গেছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীর থেকে বিগত দুইদিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মৃতদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে।
লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্টের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশটির বেনগাজি উপকূলে ২০ বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেগুলোতে পচন ধরায় ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট না থাকায় দেশটির ব্রেগা নামক স্থান থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ওই মরদেহগুলো দাফন করা হয়।
অভিযুক্ত দালাল তোফাজ্জলের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে লিবিয়ার ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। অপরদিকে কবির মিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী জুয়েলের বাবা সাদেক মিয়া জানান, গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন জুয়েল। লিবিয়া প্রবাসি বড় ভাই কালামের মাধ্যমে দেশটি যান তিনি। সেখানে তোফাজ্জল দালালের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ জানুয়ারি জুয়েলের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয়েছিলো তার পরিবারের। এরপর থেকেই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একই অবস্থা আশিক, মুস্তাক, রাকিব ও ইমরানের। ইতালি যাওয়ার পথে তারাও ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ আছে বলে জানান তাদের পরিবার।
নিখোঁজ ৬ জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের সন্ধান পেতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসিদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম নরসিংদীর কো-অর্ডিনেটর আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, রায়পুরা নিখোঁজ ৬ যুবক যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করব। অবৈধপথে বিদেশ না যেতে যুবকদের নিরুৎসাহিত করছি। উঠান বৈঠক, ইউনিয়ন ওর্য়াশপ, ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রবাস বন্ধু ফোরামের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ জানান, ৬ যুবক নিখোঁজের খবর শুনিনি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, লিবিয়ায় ট্রলার ডুবিতে ২০ বাংলাদেশি নিহতের খবর শুনেছি। সেখানে ওই ৬ জন আছে কিনা নিশ্চিত নয়। এব্যাপারে আমরা খোঁজ নিব। মানবপাচারে সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।